শিশুর ডায়াপার র্যাশ নাকি ফাঙ্গাল ইনফেকশন? পার্থক্য বুঝবেন যেভাবে এবং ঘরোয়া ও সঠিক চিকিৎসা
লাল হয়ে যাওয়া ত্বক আর মায়ের দুশ্চিন্তা
কেন হয়: যখন দীর্ঘক্ষণ ভেজা ডায়াপার পরে থাকে, তখন প্রস্রাবের অ্যামোনিয়া এবং পায়খানার ব্যাকটেরিয়া মিলে এনজাইম তৈরি করে যা ত্বকের পিএইচ (pH) লেভেল নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও ডায়াপার খুব টাইট হলে ঘষা লেগে (Friction) চামড়া ছিলে যায়। লক্ষণ: ত্বক লালচে বা গোলাপি দেখাবে। ত্বক খসখসে মনে হতে পারে। হাত দিলে বাবু কেঁদে উঠতে পারে বা অস্বস্তি বোধ করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: এই র্যাশ সাধারণত ত্বকের ভাঁজে (Skin Folds) হয় না। কুঁচকির গভীরে যেখানে চামড়া ভাঁজ হয়ে থাকে, সেই জায়গাটা সাধারণত পরিষ্কার থাকে।
কেন হয়: যদি সাধারণ র্যাশ ২-৩ দিনের বেশি থাকে এবং চিকিৎসা না করা হয়, তবে সেখানে ফাঙ্গাস আক্রমণ করে। এছাড়া শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, তখন ফাঙ্গাস মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। লক্ষণ: রঙ হবে টকটকে লাল (Bright Beefy Red)। র্যাশের সীমানা বা বর্ডার স্পষ্ট থাকবে (Well-defined border)। স্যাটেলাইট লিশন (Satellite Lesions): মূল লাল অংশের বাইরে ছোট ছোট লাল দানা বা ফুসকুড়ি ছিটিয়ে থাকবে। এটাই ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ভাঁজ বা কুঁচকি: ফাঙ্গাল ইনফেকশন কুঁচকির ভাঁজের ভেতরে (Skin folds) লুকিয়ে থাকে। যদি দেখেন ভাঁজের ভেতরটাও লাল হয়ে আছে, তবে ৯৯% নিশ্চিত থাকুন এটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন।
প্লাস্টিক প্যান্টের ব্যবহার: গ্রামে বা মফস্বলে অনেকেই কাপড় বা কাঁথা ব্যবহারের পর লিক বন্ধ করতে প্লাস্টিকের প্যান্ট পরান। এতে বাতাস চলাচল একদম বন্ধ হয়ে যায়, যা ফাঙ্গাসের জন্য আদর্শ পরিবেশ। পাউডারের ব্যবহার: বাংলাদেশে গোসলের পর ট্যালকম পাউডার মাখানোর একটা পুরোনো অভ্যাস আছে। কিন্তু ডাক্তাররা এখন এটা কঠোরভাবে নিষেধ করেন। পাউডার ঘাম বা ভেজাভাব শুষে নিয়ে দলা পাকিয়ে যায়, যা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বাসা বাঁধতে সাহায্য করে। তাছাড়া পাউডার শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। সরিষার তেল: খাঁটি সরিষার তেল বড়দের জন্য ভালো হলেও, নবজাতকের র্যাশের ওপর দিলে এটি জ্বালাপোড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘক্ষণ ডায়াপার রাখা: অনেক বাবা-মা সাশ্রয় করার জন্য ডায়াপার ভারী না হওয়া পর্যন্ত বদলান না। কিন্তু মনে রাখবেন, আধুনিক ডায়াপারে জেল থাকায় ওপরটা শুকনো লাগলেও ভেতরে ব্যাকটেরিয়া ঠিকই কাজ করতে থাকে।
এয়ার টাইম (Air Time): এটিই সেরা ওষুধ। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ ঘণ্টা শিশুকে ডায়াপার ছাড়া খোলা রাখুন। নিচে একটা ওয়াটারপ্রুফ ম্যাট বা কাঁথা বিছিয়ে দিন। বাতাস লাগলে ফাঙ্গাস বাঁচতে পারে না এবং ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যায়। নারকেল তেল: খাঁটি নারকেল তেলের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং ময়েশ্চারাইজিং গুণ আছে। র্যাশ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনে পাতলা করে নারকেল তেল লাগাতে পারেন। তবে নিশ্চিত হোন তেলটি যেন কেমিক্যালমুক্ত হয়। কুসুম গরম পানি: ওয়াইপস (Wipes) ব্যবহারে অনেক সময় কেমিক্যাল থাকে যা জ্বালাপোড়া বাড়ায়। র্যাশ থাকা অবস্থায় ওয়াইপস বাদ দিয়ে তুলা ভিজিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। আলতো করে মুছবেন, ঘষবেন না (Pat dry, don't rub)। ভিনেগার বাথ (Fungal এর জন্য): যদি ফাঙ্গাল ইনফেকশন সন্দেহ হয়, তবে গোসলের পানিতে সামান্য সাদা ভিনেগার বা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে (খুবই হালকা) সেই পানি দিয়ে ধোয়াতে পারেন। এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক করতে সাহায্য করে, যা ফাঙ্গাস পছন্দ করে না।
সাধারণ র্যাশের জন্য: জিঙ্ক অক্সাইড (Zinc Oxide) বা পেট্রোলিয়াম জেলি যুক্ত ব্যারিয়ার ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি প্রস্রাব ও পায়খানা থেকে ত্বককে আলাদা রাখে। মনে রাখবেন, ক্রিমটা একটু মোটা প্রলেপে (Frosted cake layer) লাগাতে হবে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য: সাধারণ র্যাশ ক্রিমে কাজ হবে না। আপনাকে 'ক্লোট্রিমাজল' (Clotrimazole), 'মাইকোনাজল' (Miconazole) বা 'নিস্টাটিন' (Nystatin) যুক্ত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এটি দিনে ২-৩ বার লাগাতে হয়। সতর্কতা: স্টেরয়েড ক্রিম (যেমন: Hydrocortisone) কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের গোপনাঙ্গে ব্যবহার করবেন না। এতে সাময়িক আরাম হলেও দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্ষতি হয়।
যদি র্যাশ থেকে রক্ত বের হয় বা ফোসকা পড়ে যায়। যদি বাচ্চার জ্বর (১০৪° ফা এর বেশি) থাকে। যদি র্যাশ ডায়াপার এরিয়া ছাড়িয়ে পেট বা পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যদি ৩ দিন ঘরোয়া যত্ন এবং ক্রিম ব্যবহারের পরেও উন্নতি না হয়। যদি বাচ্চার প্রস্রাব কমে যায় বা প্রস্রাবের সময় কান্না করে।
ঘন ঘন ডায়াপার পরিবর্তন: নবজাতকের ক্ষেত্রে দিনে ১০-১২ বার এবং একটু বড় হলে ৬-৮ বার ডায়াপার চেক করুন। পটি করার সাথে সাথে বদলাতে হবে। সঠিক সাইজ: খুব টাইট ডায়াপার পরানো যাবে না। বাতাস চলাচলের জন্য একটু ঢিলেঢালা ডায়াপার ভালো। ব্র্যান্ড পরিবর্তন: অনেক সময় নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ডায়াপারের উপাদানে বাচ্চার অ্যালার্জি থাকে। র্যাশ বারবার হলে ডায়াপারের ব্র্যান্ড পরিবর্তন করে দেখুন। ব্রেস্ট মিল্ক: যেসব মায়েরা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তারা যদি অ্যান্টিবায়োটিক খান তবে বাচ্চার ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার (যেমন দই) খাওয়া ভালো।
শিশুর ত্বকের সুরক্ষায় সঠিক পণ্য খুঁজছেন?
আপনার সোনামনির জন্য সেরা মানের ডায়াপার, র্যাশ ক্রিম, এবং অথেনটিক বেবি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আজই ভিজিট করুন **TrustShopBD (www.trustshopbd.com)**। এখানে আপনি পাবেন ১০০% অরিজিনাল পণ্য যা শিশুর কোমল ত্বকের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। সন্তানের সুরক্ষায় ট্রাস্টশপবিডি-র ওপর আস্থা রাখুন।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *




.webp)
 (1080 x 1080 px).webp)
.webp)
.webp)
.webp)