https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Trust.webp
Breaking News

ঢাকার ভ্যাপসা গরমে মেঘলা আকাশ দেখে ভুলবেন না: শিশুর ত্বকের সানবার্ন ও সুরক্ষা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইড

top-news
  • 03 Dec, 2025
https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/eporichoy.webp

মেঘলা দিনেও কি রোদ পোড়ায়?

ঢাকার আবহাওয়া বোঝা বড় দায়। এই মুহূর্তে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, তো পরক্ষণেই মেঘ ফুঁড়ে বের হওয়া কড়া রোদ। আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তারা "ভ্যাপসা গরম" শব্দটার সাথে খুব পরিচিত। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আকাশ যখন মেঘলা থাকে, তখন আমরা অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। ভাবি, আজ তো রোদ নেই, বাচ্চার ত্বকের কোনো ক্ষতি হবে না। বাচ্চাকে নিয়ে হয়তো ছাদে বা বারান্দায় খেলতে দিই, কিংবা রিকশায় হুড ফেলে ঘুরি। কিন্তু আপনি কি জানেন? এই মেঘলা দিনেও আপনার আদরের সোনামণির ত্বক পুড়ে যেতে পারে বা ‘সানবার্ন’ হতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মেঘ সূর্যের তাপ আটকাতে পারে, কিন্তু সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি বা UV Rays পুরোপুরি আটকাতে পারে না। বরং মেঘের কণা অনেক সময় এই রশ্মিকে রিফ্লেক্ট করে আরও তীব্র করে তোলে। বড়দের ত্বক এই ধকল সইতে পারলেও, শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ পাতলা। তাই ঢাকার এই হিউমিড বা আর্দ্র আবহাওয়ায় শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়া একটু বেশিই জরুরি। আজ আমরা কথা বলবো এমন এক বিষয় নিয়ে যা সচরাচর আমাদের আলোচনার বাইরে থাকে—বর্ষাকালে শিশুর সানবার্ন ও তার প্রতিকার।

১. ঢাকার বর্ষা এবং UV রশ্মির গোপন খেলা

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে সূর্যের তেজ এমনিতেই বেশি থাকে। বর্ষাকালে যখন আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা থাকে, তখন আমরা ভাবি সানস্ক্রিন বা সুরক্ষার দরকার নেই। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, মেঘলা দিনেও প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত UV রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।

ঢাকার কনক্রিটের জঙ্গল এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। একে তো রোদের তাপ, তার ওপর বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প বা হিউমিডিটি। ফলে শিশুর শরীর থেকে ঘাম বের হলেও তা চট করে শুকায় না। ঘামে ভেজা ত্বক যখন রোদের সংস্পর্শে আসে, তখন 'ফটো-সেনসিটিভিটি' বা আলোক সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এর ফলে খুব অল্প সময়েই বাচ্চার গাল, ঘাড় বা হাতের চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে। একে আমরা সাধারণ র‍্যাশ ভাবলেও, অনেক ক্ষেত্রেই এটি আসলে মাইল্ড সানবার্ন।

২. শিশুর ত্বক কেন এত সংবেদনশীল?

শিশুর ত্বক আর বড়দের ত্বক এক নয়। জন্মের পর প্রথম কয়েক বছর শিশুর ত্বকের মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকে। মেলানিন আমাদের ত্বককে রোদের ক্ষতি থেকে প্রাকৃতিকভাবে রক্ষা করে। মেলানিন কম থাকার কারণে মাত্র ১০-১৫ মিনিট কড়া বা মেঘলা রোদে থাকলেই শিশুর ত্বকে প্রদাহ শুরু হতে পারে।

তাছাড়া ঢাকার বাতাসে ধুলোবালি ও দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। বর্ষাকালে রাস্তার কাদা-পানি আর বাতাসের ধূলিকণা মিলে একাকার হয়ে যায়। রোদে পোড়া ত্বকে যখন এই দূষিত বাতাস লাগে, তখন সানবার্নের সাথে সাথে একজিমা বা হিট র‍্যাশের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৩. সানবার্ন চেনার উপায়: সাধারণ র‍্যাশ নাকি অন্য কিছু?

অনেক বাবা-মা বুঝতেই পারেন না যে বাচ্চার সানবার্ন হয়েছে। তারা ভাবেন হয়তো গরমের কারণে গাল লাল হয়েছে। সানবার্ন চেনার কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

  • ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া: রোদে যাওয়ার ২-৪ ঘণ্টা পর বাচ্চার মুখের ত্বক, ঘাড় বা কান লাল হয়ে যাবে।

  • স্পর্শে ব্যথা: লাল হওয়া জায়গায় হাত দিলে বাচ্চা কেঁদে উঠতে পারে বা অস্বস্তি বোধ করতে পারে।

  • গরম অনুভূত হওয়া: আক্রান্ত স্থানটি শরীরের অন্য অংশের তুলনায় বেশি গরম মনে হবে।

  • চুলকানি: সানবার্ন হওয়ার ১-২ দিন পর ওই জায়গাটি চুলকাতে পারে এবং চামড়া উঠতে পারে।

  • জ্বর: সিভিয়ার বা মারাত্মক সানবার্ন হলে বাচ্চার জ্বরও আসতে পারে।

৪. সুরক্ষার প্রথম ধাপ: সঠিক পোশাক নির্বাচন

ঢাকার গরমে বাচ্চাকে কী পরাবেন, এটা নিয়ে মায়েরা খুব দ্বিধায় থাকেন। সানবার্ন থেকে বাঁচাতে হলে পোশাকই হলো প্রথম বর্ম বা 'ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স'।

  • সুতি কাপড়ের জয়জয়কার: বর্ষাকালে সিনথেটিক বা সিল্কের কাপড় একদম নয়। ১০০% সুতি বা লিলেন কাপড় পরাতে হবে। সুতি কাপড় বাতাস চলাচল করতে দেয়, ফলে বাচ্চার শরীর ঠান্ডা থাকে।

  • রঙের খেলা: গাঢ় রঙ সূর্যের তাপ শোষণ করে বেশি, আবার খুব হালকা রঙ UV রশ্মি আটকাতে পারে না। তাই বাচ্চার জন্য বেছে নিন উজ্জ্বল কিন্তু হালকা শেড, যেমন—আকাশি, হালকা গোলাপি বা লেমন কালার।

  • ফুল হাতা বনাম হাফ হাতা: বাইরে বের হলে বাচ্চাকে ফুল হাতা পাতলা সুতির জামা পরানোই ভালো। এতে সরাসরি রোদ ত্বকে লাগে না। মশাবাহিত রোগ থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়।

  • টুপি বা হ্যাট: চওড়া বর্ডার দেওয়া টুপি বা হ্যাট ব্যবহার করুন যা বাচ্চার মুখ, কান এবং ঘাড়কে ছায়া দেবে। ঢাকার নিউমার্কেট বা অনলাইন শপগুলোতে বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর ‘বাকেট হ্যাট’ পাওয়া যায়।

৫. সানস্ক্রিন: মাখবো কি মাখবো না?

আমাদের দেশে বাচ্চাদের সানস্ক্রিন মাখানোর চল খুব একটা নেই। কিন্তু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। তবে বড়দের সানস্ক্রিন বাচ্চাদের দেওয়া যাবে না।

  • মিনারেল সানস্ক্রিন: বাচ্চার জন্য কিনবেন 'ফিজিক্যাল' বা 'মিনারেল' সানস্ক্রিন। এগুলোর মূল উপাদান হলো জিঙ্ক অক্সাইড (Zinc Oxide) বা টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড (Titanium Dioxide)। এগুলো ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে না, বরং ত্বকের ওপর একটা আস্তরণ তৈরি করে রোদকে প্রতিফলিত করে।

  • SPF কত হবে? বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাচ্চাদের জন্য SPF 30 থেকে SPF 50 এর মধ্যে থাকা সানস্ক্রিন সবচেয়ে ভালো।

  • ব্যবহারের নিয়ম: বাইরে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। বাচ্চার মুখ, কান, হাতের খোলা অংশ এবং পায়ের পাতায় ভালোভাবে মাখিয়ে দিন। যদি বাচ্চা বেশি ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজে যায়, তবে ২ ঘণ্টা পর আবার লাগাতে হবে।

৬. হাইড্রেডশন বা পানি পানের গুরুত্ব

সানবার্ন কেবল বাইরের বিষয় নয়, শরীরের ভেতর থেকেও ত্বককে রক্ষা করা যায়। বর্ষার ভ্যাপসা গরমে বাচ্চা প্রচুর ঘামে, ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ডিহাইড্রেটেড ত্বক খুব দ্রুত রোদে পুড়ে যায়।

  • বুকের দুধ: ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধই একমাত্র পানীয়। গরমে বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

  • তরল খাবার: একটু বড় বাচ্চাদের জন্য ডাবের পানি, ঘরে বানানো ফলের জুস, বা লেবুর শরবত দেওয়া যেতে পারে। রাস্তার ধারের খোলা শরবত বা রঙিন জুস একদম এড়িয়ে চলুন।

  • সবজি ও ফল: বাচ্চাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ, পাকা পেঁপে বা শসা খাওয়ালে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৭. ঘরোয়া টোটকা: দাদী-নানীর পরামর্শ

সানবার্ন বা রোদ থেকে এসে বাচ্চার ত্বক জ্বালাপোড়া করলে আমাদের দেশের কিছু প্রাচীন ঘরোয়া পদ্ধতি বেশ কাজে দেয়।

  • শসার রস: শসা গ্রেট করে বা রস করে ত্বকের লালচে অংশে লাগালে খুব দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। শসা ত্বককে ঠান্ডা করে এবং জ্বালাপোড়া কমায়।

  • অ্যালোভেরা জেল: যদি বাসায় অ্যালোভেরা গাছ থাকে, তবে তা থেকে তাজা জেল বের করে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা জেল বাচ্চার ত্বকে লাগালে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

  • টক দই: গোসলের আগে বাচ্চার শরীরে টক দই মেখে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকে এবং রোদে পোড়া দাগ কমে।

  • নারকেল তেল: খাঁটি নারকেল তেল ত্বকের সুরক্ষায় ভালো, তবে রোদে বের হওয়ার আগে তেল মাখবেন না। এতে ত্বক আরও বেশি পুড়ে যেতে পারে বা ট্যান পড়তে পারে। তেল মাখবেন গোসলের পর বা রাতে।

৮. কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?

সাধারণত ঘরোয়া যত্নেই সানবার্ন ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কিছু লক্ষণ দেখলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি বাচ্চার ত্বকে ফোসকা (Blisters) পড়ে যায়।

  • যদি বাচ্চার প্রচণ্ড জ্বর আসে বা বমি হয়।

  • বাচ্চা যদি নিস্তেজ হয়ে পড়ে বা প্রস্রাব কমে যায়।

  • ত্বকের লালচে ভাব যদি ৩-৪ দিনের মধ্যেও না কমে।

৯. ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম ও সতর্কতা

ঢাকায় আমরা যখন বাচ্চার সাথে বের হই, তখন ট্রাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। সিএনজি বা রিকশায় থাকলে সরাসরি রোদ এসে বাচ্চার গায়ে লাগে।

  • রিকশায় হুড তুলে দিন, প্রয়োজনে পাশে গামছা বা কাপড় ঝুলিয়ে ছায়া নিশ্চিত করুন।

  • গাড়িতে থাকলে বাচ্চার সিটের জানলায় 'সান শেড' (Sun Shade) ব্যবহার করুন। গ্লাস থাকলেও রোদ ঢুকে ত্বক পোড়াতে পারে।

  • সবচেয়ে ভালো হয় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে না বের হওয়া। এই সময়ে রোদের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে।

উপসংহার

শিশুর হাসিই বাবা-মায়ের পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য। ঢাকার এই দূষণ আর রুক্ষ আবহাওয়ায় সেই হাসি মলিন হতে দেবেন না। বর্ষার মেঘলা আকাশ দেখে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। সঠিক পোশাক, নিরাপদ সানস্ক্রিন এবং একটু সচেতনতাই পারে আপনার সোনামণিকে সানবার্ন থেকে রক্ষা করতে। মনে রাখবেন, আজকের এই ছোট যত্ন ভবিষ্যতে আপনার বাচ্চার স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে এবং ত্বককে রাখবে সুস্থ ও সতেজ।

কোথায় পাবেন অরিজিনাল বেবি কেয়ার প্রোডাক্ট?
আপনার শিশুর কোমল ত্বকের জন্য প্রয়োজন শতভাগ আসল এবং নিরাপদ পণ্য। ভেজালের ভিড়ে সঠিক পণ্যটি খুঁজে পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। শিশুর জন্য সেরা মানের সানস্ক্রিন, লোশন বা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারেন TrustShopBD-এর ওপর। তাদের কাছে পাবেন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের অথেনটিক বেবি প্রোডাক্ট যা আপনার বাচ্চার সুরক্ষায় আপোষহীন।

ভিজিট করুন: www.trustshopbd.com – আস্থার সাথে কিনুন, পরম মমতায় আগলে রাখুন আপনার সন্তানকে।

https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Genus.webp

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *