বাংলাদেশে অনলাইনে ব্যবসার আসল খরচ: যে গোপন খরচের ফাঁদে আপনি পা দিচ্ছেন (হিসেব মিলিয়ে নিন)
বাংলাদেশে ই-কমার্স বা এফ-কমার্স (ফেইসবুক কমার্স) এখন আর কেবল ট্রেন্ড নয়, বরং এটি একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। "চাকরি করব না, উদ্যোক্তা হব"—এই মানসিকতা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ-তরুণী অনলাইনে পেজ খুলছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি খুবই লাভজনক মনে হয়। একটা ফেইসবুক পেজ খুললাম, চকচক বাজার বা জিঞ্জিরা থেকে কিছু প্রোডাক্ট সোর্সিং করলাম, আর বুস্ট করে দিলাম—ব্যাস, টাকা আর টাকা!
১. রিটার্ন বা ফেরত আসা পার্সেলের ভুতুড়ে খরচ (The RTO Nightmare)
২. প্যাকেজিং এবং ব্র্যান্ডিংয়ের অদৃশ্য খরচ
বাবল র্যাপ (Bubble Wrap): প্রোডাক্ট যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য প্রচুর বাবল র্যাপ লাগে। এক রোল বাবল র্যাপের দাম ৫০০-১২০০ টাকা, যা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কাস্টমাইজড বক্স: সাধারণ কার্টন বক্স দেখতে সস্তা লাগে। আপনি যদি নিজের লোগোসহ বক্স বানাতে চান, মিনিমাম ১০০০ পিস অর্ডার করতে হবে, যার একেকটির দাম ১৫-৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। টেপ এবং লেবেল: বিশ্বাস করুন, প্যাকিং টেপ এবং প্রিন্টেড ইনভয়েস বা লেবেলের খরচ মাসের শেষে হিসেব করলে চোখ কপালে উঠবে।
৩. পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ক্যাশ-আউট চার্জ
COD Charge: অনেক কুরিয়ার কোম্পানি সংগৃহীত টাকার ওপর ১% বা তার বেশি 'ক্যাশ হ্যান্ডলিং চার্জ' বা COD চার্জ কাটে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার প্রোডাক্টে ১০ টাকা তারা রেখে দেবে। মোবাইল ব্যাংকিং খরচ: কাস্টমার যদি আপনাকে বিকাশ বা নগদে পেমেন্ট করে, আপনি যখন সেই টাকা এজেন্ট থেকে ক্যাশ-আউট করতে যাবেন, তখন হাজারে ১৮.৫০ টাকা বা তার বেশি খরচ হবে। আপনি যদি মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করেন, সেখানেও ট্রানজেকশন ফি আছে।
৪. কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন
ফটোগ্রাফি: ভালো মানের ছবি তুলতে গেলে ডিএসএলআর বা ভালো মানের ফোনের পাশাপাশি লাইটবক্স, রিং লাইট, এবং নান্দনিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা প্রপস (ফুলদানি, কার্পেট) লাগে। মডেল বা ইনফ্লুয়েন্সার: আপনি যদি শাড়ি বা পোশাকের ব্যবসা করেন, তবে মডেল ছাড়া প্রোডাক্ট সেল করা কঠিন। একজন মডেলকে দিয়ে ফটোশুট করানো বা ছোটখাটো ইনফ্লুয়েন্সারকে দিয়ে রিভিউ করানোর খরচ আছে। অনেক সময় তাদের 'পিআর প্যাকেজ' (ফ্রি গিফট) পাঠাতে হয়, যার খরচ পুরোটাই আপনার পকেট থেকে যায়।
৫. নষ্ট বা ড্যামেজ প্রোডাক্ট (Inventory Shrinkage)
কুরিয়ারের অবহেলা: কুরিয়ারের গাড়িতে বা হাব-এ প্রোডাক্ট চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, কাঁচের জিনিস ভেঙে যাওয়া, লিকুইড প্রোডাক্ট লিক করা—এগুলো নিত্যদিনের ঘটনা। কুরিয়ার কোম্পানি খুব কম সময়ই এর ক্ষতিপূরণ দেয়। আবহাওয়া: বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় অনেকদিন স্টকে থাকা পোশাক ফাঙ্গাস পড়ে নষ্ট হতে পারে, লেদারের পণ্য চামড়া উঠে যেতে পারে। ডেড স্টক (Dead Stock): আপনি হয়তো শীতের জন্য ১০০ পিস হুডি এনেছিলেন। ৭০ পিস বিক্রি হলো, ৩০ পিস রয়ে গেল। গরম পড়ে যাওয়ায় এই ৩০ পিস আর বিক্রি হবে না। এই আটকে থাকা টাকাটা (Capital Lock) ব্যবসার জন্য বড় ক্ষতি। এই খরচটা আমরা প্রায়ই এড়িয়ে যাই।
৬. কমিউনিকেশন এবং কাস্টমার সাপোর্ট কস্ট
ফোন বিল: কাস্টমারকে কনফার্মেশনের জন্য কল করা, কুরিয়ারের সাথে ঝগড়া করা (প্রোডাক্ট কেন ডেলিভারি হলো না)—এতে প্রচুর মোবাইল ব্যালেন্স খরচ হয়। এসএমএস (SMS) ইন্টিগ্রেশন: বাল্ক এসএমএস বা অটোমেটেড কনফার্মেশন মেসেজ পাঠাতে সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন ফি লাগে। সময়ের মূল্য (Opportunity Cost): আপনি নিজে যদি সারাদিন চ্যাটিং আর কমেন্টের রিপ্লাই দেন, তবে ব্যবসার গ্রোথ নিয়ে ভাববেন কখন? আর যদি মডারেটর রাখেন, তবে তার বেতন (মাসে ৫০০০-১০০০০ টাকা) একটি বড় ফিক্সড কস্ট।
৭. লিগ্যাল এবং প্রশাসনিক খরচ
ট্রেড লাইসেন্স: সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স করতে এবং প্রতি বছর নবায়ন করতে ৫০০০-৮০০০ টাকা খরচ হতে পারে। TIN এবং ভ্যাট: বর্তমানে ফেসবুকে বুস্ট করতে গেলে ভ্যাট দিতে হয়। ব্যাংকে ট্রানজেকশন বাড়লে ট্যাক্স ফাইলের ঝামেলা আছে। এগুলো মেইনটেইন করতে অনেক সময় প্রফেশনাল কনসালট্যান্টের দরকার হয়, যা একটি বাড়তি খরচ।
৮. টেকনোলজি এবং সফটওয়্যার
ওয়েবসাইট: ডোমেইন, হোস্টিং এবং ডেভেলপার খরচ। বছরে রিনিউয়াল ফি আছে। অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার: ইনভেন্টরি এবং কুরিয়ার ট্র্যাকিং একসাথে করার জন্য বিভিন্ন দেশি সফটওয়্যার (SaaS) এখন সাবস্ক্রিপশন মডেলে কাজ করে। মাসে ৫০০-২০০০ টাকা এই খাতেও যায়।
৯. অদৃশ্য মানসিক চাপ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি
উপসংহার: বাঁচার উপায় কী?
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *




.webp)
 (1080 x 1080 px).webp)
.webp)
.webp)
.webp)