https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Trust.webp
Breaking News

দম ফেলার সময় নেই? ব্যস্ত প্রফেশনালদের জন্য সুস্থ থাকার ১০টি কার্যকরী লাইফস্টাইল হ্যাক

top-news
  • 03 Dec, 2025
https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/eporichoy.webp

সকাল ৭টায় অ্যালার্ম। কোনোমতে নাস্তা মুখে দিয়ে (বা না দিয়ে) উবারের জন্য অপেক্ষা কিংবা বাসের ধাক্কাধাক্কি। এরপর জ্যাম ঠেলে অফিসে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই বসের ডাক। সারাদিন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকা, দুপুরে ক্যান্টিনের তেলযুক্ত খাবার বা বাইরের বিরিয়ানি, আর বিকেলে কলিগদের সাথে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা আর সিঙ্গারা। অফিস শেষে আবার জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। শরীর তখন আর চলে না, কিন্তু মনের ক্লান্তি দূর করতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক বা রিলস স্ক্রল করতে করতে রাত ২টা বেজে যায়।

বাংলাদেশের বা এশিয়ার অধিকাংশ করপোরেট চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ীর রুটিন এখন অনেকটা এমনই। আমরা ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে শরীরটাকে ভেঙে ফেলছি। পেটে মেদ জমছে, ঘাড়ে ব্যথা (Spondylitis), গ্যাসট্রিক আর ইনসমনিয়া এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী।

অনেকে ভাবেন, "সুস্থ থাকতে হলে জিমে যেতে হবে, আর আমার তো জিমে যাওয়ার সময় নেই।" ভুল ভাবছেন! সুস্থ থাকার জন্য আপনাকে বডি বিল্ডার হতে হবে না। শুধু লাইফস্টাইলে ছোট কিছু পরিবর্তন আনলেই হবে। চলুন, আজ আড্ডাচ্ছলে জেনে নিই ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সুস্থ থাকার কিছু গ্রাউন্ডব্রেকিং টিপস।

১. সকালের শুরুটা হোক জাদুকরী (Don't Skip Breakfast)

বাঙালি হিসেবে আমাদের অনেকের অভ্যাস হলো সকালে না খেয়ে দৌড় দেওয়া। এতে দুপুরের আগেই শরীর ভেঙে পড়ে এবং দুপুরে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলি।

  • সমাধান: সকালে ভারী কিছু খেতে না পারলে অন্তত দুটো সেদ্ধ ডিম, একটা কলা বা এক মুঠো ভেজানো ছোলা খেয়ে নিন। ওটস (Oats) হতে পারে দারুণ সমাধান—বানাতে সময় লাগে না, পেটও ভরা থাকে। সকালে প্রোটিন খেলে সারাদিন এনার্জি লেভেল ঠিক থাকে।

২. অফিসের লাঞ্চ: বিরিয়ানি নাকি বাসার খাবার?

অফিসের আশেপাশে হয়তো কাচ্চি বা তেহারির দারুণ সব দোকান। কিংবা ক্যান্টিনের খাবারে তেলের বন্যা। প্রতিদিন এসব খেলে কোলেস্টেরল আর ফ্যাটি লিভার নিশ্চিত।

  • টিফিন কালচার: ছোটবেলার মতো আবার টিফিন ক্যারিয়ার ব্যবহার শুরু করুন। বাসা থেকে অল্প ভাত, বেশি করে সবজি আর মাছ/মাংস নিয়ে যান।

  • পোর্শন কন্ট্রোল: যদি বাইরের খাবার খেতেই হয়, তবে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিন। সালাদ বা সবজি বেশি নিন। মনে রাখবেন, বাঙালির প্রধান শত্রু ভাত নয়, ভাতের পরিমাণ।

৩. বিকেলের নাস্তা: সিঙ্গারা-সমুচা ট্র্যাপ

বিকেল ৫টা বাজলেই অফিসের পিয়ন মামা গরম সিঙ্গারা, সমুচা বা পুরি নিয়ে আসে। সাথে দুধ চা। এটাই আপনার ওজন বাড়ার প্রধান কারণ।

  • স্মার্ট বিকল্প: আপনার ডেস্কের ড্রয়ারে সবসময় কিছু ড্রাই ফ্রুটস (কাঠবাদাম, কাজু, কিসমিস) বা বিস্কুট (সুগার-ফ্রি) রাখুন। খিদে পেলে এগুলো খান। দুধ চায়ের বদলে গ্রিন টি বা রং চা (চিনি ছাড়া) অভ্যেস করুন। শুরুতে খারাপ লাগবে, কিন্তু এক সপ্তাহ পর দেখবেন শরীর কত হালকা লাগছে।

৪. পানি খান, হাইড্রেটেড থাকুন

এসি রুমে বসে কাজ করলে তৃষ্ণা কম পায়, তাই আমরা পানি কম খাই। এতে কিডনির সমস্যা আর মাথাব্যথা বাড়ে।

  • হ্যাক: আপনার ডেস্কে সবসময় একটা সুন্দর পানির বোতল রাখুন। লক্ষ্য ঠিক করুন—লাঞ্চের আগে ১ লিটার এবং লাঞ্চের পরে ১ লিটার পানি শেষ করবেন। এখন অনেক অ্যাপ আছে যা মনে করিয়ে দেয় পানি খাওয়ার কথা, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

৫. "সিটিং ডিজিজ" থেকে বাঁচুন (Move More)

ডাক্তাররা এখন বলছেন, "Sitting is the new smoking." টানা বসে থাকলে শরীরের মেটাবলিজম কমে যায়।

  • ডেস্ক এক্সারসাইজ: প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর ৫ মিনিটের ব্রেক নিন। ওয়াশরুমে হেঁটে আসুন বা বারান্দায় যান।

  • লিফট বনাম সিঁড়ি: অফিস যদি ৫-৬ তলায় হয়, তবে লিফটের মায়া ত্যাগ করুন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা আপনার হার্টের জন্য সেরা এক্সারসাইজ।

  • স্ট্যান্ডিং মিটিং: কলিগদের সাথে ছোটখাটো মিটিং দাঁড়িয়ে বা হাঁটতে হাঁটতে করুন।

৬. চোখের যত্ন ও ডিজিটাল ডিটক্স

সারাদিন স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকায় চোখের বারোটা বাজছে।

  • ২০-২০-২০ রুল: প্রতি ২০ মিনিট পর, ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এতে চোখের মাসল রিল্যাক্স হয়।

  • ব্লু-লাইট চশমা: কম্পিউটারে কাজ করার সময় ব্লু-লাইট প্রোটেকশন গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

৭. ট্রাফিক জ্যামকে কাজে লাগান

ঢাকায় বা বড় শহরে জ্যামে বসে থাকা জীবনের একটা বড় অংশ। এই সময়টা বিরক্ত না হয়ে কাজে লাগান।

  • মেন্টাল পিস: গাড়িতে বসে মেডিটেশন মিউজিক বা পডকাস্ট শুনুন।

  • অডিও বুক: বই পড়ার সময় পান না? জ্যামে বসে অডিও বুক শুনুন। এতে মানসিক চাপ কমে।

৮. ঘুমের সাথে আপোষ নয় (Sleep Hygiene)

"উইকএন্ডে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেব"—এটা সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা। প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

  • নো ফোন জোন: ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে ফোন দূরে রাখুন। স্ক্রিনের আলো মেলাটোনিন হরমোন কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।

  • নির্দিষ্ট সময়: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ভালো ঘুম হলে পরের দিন কাজে মনোযোগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

৯. "না" বলতে শিখুন (Stress Management)

অফিসে কাজের চাপ থাকবেই। কিন্তু সব কাজ নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া বা কলিগের কাজ করে দেওয়া—এটা আপনার স্ট্রেস বাড়াবে। নিজের ক্যাপাসিটি বুঝুন এবং ভদ্রভাবে "না" বলতে শিখুন। মানসিক শান্তি বা "Mental Peace" প্রোডাক্টিভিটির জন্য খুব জরুরি।

১০. সপ্তাহ শেষে একটু "নিজের সময়"

ছুটির দিনটা শুধু ঘুমানো বা দাওয়াত খাওয়ার জন্য নয়। সপ্তাহে অন্তত একদিন সকালে পার্কে বা ছাদে হাঁটুন। প্রকৃতির কাছাকাছি যান। পরিবারের সাথে কোয়ালিটি সময় কাটান। রিকশা করে একটু হাওয়া খেয়ে আসুন। এই ছোট ছোট আনন্দগুলো আপনাকে নতুন সপ্তাহের জন্য রিচার্জ করবে।

উপসংহার

সুস্থ থাকা কোনো রকেট সায়েন্স নয়, এটি একটি অভ্যাসের নাম। একদিনে সব পরিবর্তন হবে না। আজ শুধু পানি খাওয়া বাড়ান, কাল সিঁড়ি ব্যবহার করুন—এভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগুতে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনার কোম্পানি আপনাকে রিপ্লেস করতে পারবে, কিন্তু আপনার পরিবার আপনাকে রিপ্লেস করতে পারবে না। তাই নিজের শরীরের যত্ন নিন, কারণ দিনশেষে এই শরীরটাই আপনার একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা।

সুস্থ থাকুন, কর্মঠ থাকুন!



https://eeraboti.cloud/uploads/images/ads/Genus.webp

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *